বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার পর র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
কী কারণে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তার বাসায় মদ, হরিণের চামড়া, ক্যাসিনো বোর্ড, ওয়াকিটকিসহ বেশ কিছু অবৈধ সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।”
পরে গভীর রাতে মিরপুরে হেলেনার জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন এবং জয়যাত্রা আইপি টিভি ভবনেও অভিযান চলানো হয় বলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান হোসেন জানান।
সম্প্রতি আলোচনায় উঠে আসা হেলেনা জাহাঙ্গীরের ঢাকার গুলশানের বাড়িতে রাত ৮টার দিকে অভিযান শুরু করে র্যাব। ঘণ্টা দুয়েক পর র্যাবের নারী সদস্যদের সেখানে ঢুকতে দেখা গেলে তাকে গ্রেপ্তারের ইঙ্গিত মিলছিল।
এরপর রাত সোয়া ১২টার দিকে পাঁচ তলা ওই বাড়িতে নিজের ফ্ল্যাট থেকে র্যাবের সদস্যদের সঙ্গে বেরিয়ে আসেন হেলেনা জাহাঙ্গীর।
হেলেনার মুখে ছিল মাস্ক। পরনে ছিল বেগুনি রঙের জামা ও হলুদ ওড়না। তিনি উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে দুবার হাতও নাড়েন।
এসময় তিনি কিছু বলতে চাইলেও সেই সুযোগ পাননি। র্যাব সদস্যরা তাকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এসময় একটি ট্রেতে করে কিছু ছুরি এবং লাল একটি লাগেজও র্যাব সদস্যদের নিয়ে যেতে দেখা যায়-এরপর র্যাবের নির্বাহী হাকিম পলাশ কুমার বসু ওই বাড়ির নিচতলায় সাংবাদিকদের বলেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়েছিলেন তারা।
অভিযানে ওই বাসা থেকে বিদেশি মদ, ওয়াকিটকি সেট, বিদেশি মুদ্রা, ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া জব্দ করার কথা বলেন তিনি।
পলাশ বসু বলেন, “জব্দকৃত আলামত ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি।”
হেলেনা জাহাঙ্গীরকে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে- সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক আপনাদের (সাংবাদিক) অতি শীঘ্র বিস্তারিত ইনফর্ম করব।”
হেলেনা জাহাঙ্গীরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে র্যাবের হাকিম বলেন, “র্যাব সদর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।”
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা গ্রুপের কর্ণধার। জয়যাত্রা টেলিভিশনের চেয়ারপারসন হেলেনা নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন।
হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটিতে সদস্য ছিলেন। কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগেরও উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন তিনি।
‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি ‘ভূইফোঁড়’ সংগঠনে হেলেনা জাহাঙ্গীরের সভাপতি হওয়ার খবর চাউর হলে সম্প্রতি তাকে দুই কমিটি থেকেই বাদ দেয় আওয়ামী লীগ।
হেলেনা এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কুমিল্লায় আব্দুল মতিন খসরুর আসনে উপনির্বাচনেও প্রার্থী হতেও চেয়েছিলেন তিনি। তবে কোনোবারই তিনি দলের মনোনয়ন পাননি।