আওয়ামী লীগের সরকার গোটা দেশেকে দুর্নীতিতে ‘পরিপূর্ণ’ করে ফেলেছে। বাংলাদেশকে একটা নতজানু দেশ হিসেবে পরিণত করতে, পরনির্ভরশীল অর্থনীতি হিসেবে তৈরি করতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে শুক্রবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কিছু লোক তারা লুট-দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে অনেক মানুষ দরিদ্র আরো দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। ‘আজকে ব্যাংকিং সেক্টারকে ধ্বংস করে দিয়েছে এই সরকার, শেয়ার মার্কেটকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানিলন্ডারিং এমন পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে যে এখন সরকার নিজেই বলছে, এটা নিয়ন্ত্রণ করার দরকার, দুদক চেষ্টা করছে। দুর্ভাগ্য আমাদের, কয়েকদিন আগে দেখলাম দুদকের সাবেক চেয়ারম্যানের নামেও দুর্নীতির অভিযোগ চলে এসেছে,’ বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার একটা মিথ তৈরি করতে চায়। মিথটা কি, সাউথ ইস্ট এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটা রোল মডেল, মধ্য আয়ের দেশ, উন্নয়নের রোল মডেল। ইটস এ টোটালি একটা ভোক্স, একটা মিথ ছাড়া কিছু না। তারা গোয়েবেলসীয় পদ্ধতিতে প্রচার-প্রচারণার মধ্যে দিয়ে আজকে সেই কথাটা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা কি? বাস্তব অবস্থাটা হচ্ছে, এখন এদেশে প্রায় ৬ কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে। আজকে করোনার যে আঘাত এসেছে সেই আঘাত সহ্য করতে পারছে না বাংলাদেশ, অর্থনীতি সহ্য করতে পারছে না। আজকে আরো দুই কোটি লোক নতুন করে দরিদ্র হয়ে গেছে। একদিকে কিছু লোক লুটের, দুর্নীতির মধ্য দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে।’
মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অর্থনৈতিক সংস্কারের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭২ সালে পশ্চিমার উন্নত বিশ্ব বলুন, গণতান্ত্রিক বিশ্ব বলুন, তারা মনে করতো যে, বাংলাদেশ ইজ এ বাসকেট কেস। এটা ফেইল্ড স্টেট হয়ে যাবে, এখান থেকে বাঁচানোর কোনো পথ নেই। সেই খান থেকে জিয়াউর রহমান সেটাকে তুলে নিয়ে এসেছিলেন উপরে। একটা পটেনশিয়াল ইকোনমির দেশ হিসেবে, একটা সম্ভাবনাময় জাতি নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। তার মধ্যে কোনো সাম্প্রদায়িকতা ছিলো না, তার মধ্যে কোনো কুপমণ্ডুকতা ছিল না। একজন আধুনিক মানুষ আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে আমাদেরকে জিয়াউর রহমানের পথ অনুসরণ করে প্রথমে আমাদের দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। জনগণকে সাথে নিতে হবে এবং সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে একীভূত করে সেই গণতন্ত্রকে ছিনিয়ে আনতে হবে, যে গণতন্ত্র আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ আছেন, তাকে মুক্ত করতে হবে। এদেশের ১৮ কোটি মানুষকে মুক্ত করতে হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫০ বছর হয়ে গেল। এই ৫০ বছরে এখন পর্যন্ত আমাদের বর্তমানে যারা দায়িত্বে রয়েছেন, জোর করে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন- আওয়ামী লীগ সরকার, তারা অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে বাংলাদেশের যে জাতি নির্মিত হচ্ছিল সেই জাতি নির্মাণের সমস্ত প্রক্রিয়াটাকে ব্যাহত করেছে এবং অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবে বাংলাদেশকে একটা পরনির্ভরশীল অর্থনীতিতে পরিণত করতে চাচ্ছে।’
ব্যক্তিখাতের বিকাশের পুরো প্রক্রিয়াটা জিয়াউর রহমানের অবদান বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী জাতীয় উদযাপন কমিটির উদ্যোগে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে ‘ব্যক্তিখাত বিকাশে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও মুক্তবাজার অর্থনীতি’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী জাতীয় উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবদুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান বক্তব্য রাখেন।