বিদায় ইসলামি আরবি বছর ১৪৪২। স্বাগত হিজরি নববর্ষ ১৪৪৩ হিজরি। করোনার বৈশ্বিক অভিঘাতের এই দুঃসময়ে বছর ঘুরে ফিরে এলো একটি নতুন বছর। করোনার বিষাদময় কালো ছায়ায় বিশ্ববাসীর আজ নাকাল ও নাভিশ্বাস অবস্থা। এই করোনার ভয়াল থাবা থেকে নিষ্কৃতি ও পরিত্রাণ মিলবে—এই আশা ও প্রত্যাশায় বিশ্ব মুসলিম হিজরি নববর্ষ বরণ করল। যদিও ইসলামে নতুন বছর পালনের কোনো অস্তিত্ব নেই, কারণ আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি দিনই সুন্দর এবং মঙ্গলময়। আসলে, বর্ষপঞ্জি হচ্ছে জীবনের একটা অপরিহার্য প্রসঙ্গের নাম। দিন, মাস আর সনের হিসাব ছাড়া আধুনিক পৃথিবীতে কোনো কাজই চলে না। আমাদের বাংলাদেশে তিনটি বর্ষপঞ্জির ব্যবহার লক্ষ করা যায়। সরকারি বেসরকারি দাপ্তরিক কাজকর্ম, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে ইংরেজি বর্ষপঞ্জি একটা অপরিহার্য মাধ্যম। হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা-পার্বণ, বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণ আর কৃষিজীবীদের আবাদি মৌসুমের হিসাব ছাড়া বাংলাদেশে বাংলা পঞ্জিকার ব্যবহার খুব একটা চোখে পড়ার মতো নয়। মুসলমানদের নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, শবেবরাত, শবেকদর, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহাসহ ধর্মীয় বিষয়াবলির জন্য হিজরি সনের হিসাব অপরিহার্য। কিন্তু জীবনের প্রাসঙ্গিকতায় ইংরেজি ও বাংলা সনের বিদায় ও বরণে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয় হিজরি সনের বেলায় তা মোটেও লক্ষ করা যায় না।
হজরত আবু মুসা আশআরির চিঠি পেয়ে হজরত উমর (রা) এ মর্মে পরামর্শ সভার আহ্বান করেন যে, এখন থেকে একটি ইসলামি তারিখ প্রবর্তন করতে হবে। উক্ত পরামর্শসভায় হজরত উসমান (রা), হজরত আলি (রা)-সহ বিশিষ্ট অনেক সাহাবি উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সকলের পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে ওই সভায় ওমর (রা) সিদ্ধান্ত দেন ইসলামি সন প্রবর্তনের। তবে কোন মাস থেকে বর্ষের সূচনা করা হবে তা নিয়ে পরস্পরের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি হয়। কেউ মত পোষণ করেন রসুল (স)-এর জন্মের মাস রবিউল আওয়াল থেকে বর্ষ শুরু করার। আবার কেউ কেউ মত পোষণ করেন, রসুলের ওফাতের মাস থেকে বর্ষ শুরু করা হোক। অন্যান্যের মতে হুজুর (স)-এর হিজরতের মাস থেকে বর্ষ করা হোক। এভাবে বিভিন্ন মতামত আলোচিত হওয়ার পর হজরত উমর (রা) বললেন, হুজুর (স.)-এর জন্মের মাস থেকে হিজরি সনের গণনা শুরু করা যাবে না। কারণ খ্রিষ্টান সম্প্রদায় হজরত ঈসা (আ)-এর জন্মের মাস থেকেই খ্রিষ্টাব্দের গণনা শুরু করেছিল। তাই রসুলের জন্মের মাস থেকে সূচনা করা হলে বাহ্যত খ্রিষ্টানদের অনুসরণ ও সাদৃশ্যতা হয়ে যায়, যা মুসলমানদের জন্য পরিত্যাজ্য।
অন্যদিকে হুজুর (স)-এর ওফাত দিবসের মাস থেকেও গণনা শুরু করা যাবে না, কারণ এতে হুজুর (স)-এর মৃত্যুব্যথা আমাদের মধ্যে বারবার উত্থিত হবে। পাশাপাশি অজ্ঞ যুগে মৃত্যুর শোক পালনের ইসলামবিরোধী একটি কুপ্রথারই পুনরুজ্জীবন ঘটবে। হজরত ওমর (রা)-এর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যকে হজরত উসমান (রা) ও হজরত আলি (রা) এক বাক্যে সহমত পোষণ করে বললেন, এরই পরিপ্রেক্ষিতে খলিফা হজরত উমর ফারুক (রা) হিজরতের বছর থেকেই ইসলামি দিনপঞ্জি গণনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় হিজরতের ১৬ বছর পর ১০ জুমাদাল উলা ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দ।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য, কো-চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রোগী কল্যাণ সোসাইটি