বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ভারত সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরের একটি গ্রাম পিরোজপুর। গ্রামটিতে দুই শতাধিক মুসলিম পরিবারের বসবাস। তাদের সঙ্গেই মিলেমিশে আছেন পাঁচটি হিন্দু পরিবার। এই পরিবারগুলোকে বছরের পর বছর আগলে রেখেছে মুসলিমরাই। সুখে-দুঃখে, সময়-অসময়ে পারস্পারিক ভাতৃত্ববোধ নিয়ে জীবন-যাপন করছেন তারা। সীমান্তবর্তী এই গ্রামটিতে হিন্দু-মুসলিম কোনো ভেদাভেদ নেই।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই গ্রামটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায়। পিরোজপুর গ্রামে সংখ্যায় একেবারে কম হলেও সাম্প্রদায়িক আক্রমণ বা রাজনৈতিক উত্তাপ কখনই স্পর্শই করেনি হিন্দু ধর্মালম্বীদের। মুসলিম পরিবারগুলোই আগলে রেখেছেন তাদের।
শ্রীমতি অঞ্জলী নামে একগৃহবধূ বলেন, ‘আমরা হিন্দু-মুসলমান এক হয়ে গ্রামটিতে বসবাস করছি। মুসলিমদের কেউ আমাদেও ওপর কোনোভাবে অত্যাচার-অবিচার করে না। আমরাও তাদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকি। এই গ্রামে আমরা খুবই ভালো আছি।’
একই গ্রামের সাবিত্রি রাণী বলেন, ‘আমরা তাদের (মুসলিম) সঙ্গে ভালভাবেই চলাফেরা করি। আমাদের মতো ভাল আর কেই নাই বোধহয়। আমরা খুবই ভাল আছি এ জায়গাতে। কোনো বিপদ হলে মুসলিমরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। সব কিছুতেই দেখে আমাদের। কোনই অসুবিধা হয় না।’
শিল্পি আরা নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা সীমান্ত এলাকায় বসবাস করছি ঠিকই, তারপরও আমাদের ভেতরে কোনো ভেদাভেদ নেই। সুখ-দুঃখে আমরা একেঅপরের পাশে দাঁড়াই।’
সম্প্রতি সারাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু পিরোজপুর গ্রামের হিন্দু পরিবারগুলো রয়েছেন নিশ্চিন্তে। জনপ্রতিনিধিরাও বলছেন এখানে ধর্মীয় কোনো ভেদাভেদ নেই।
শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, ‘সীমান্তবর্তী এলাকায় আমরা ভালই আছি। হিন্দু-মুসলিম এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা কখনোই তাদের নির্যাতন করেনি। কেউ কখনো তাদের নির্যাতন করেনি।’
দেশের অন্যান্য সীমান্তের মতো কড়া নজরদারি রয়েছে পিরোজপুর সীমান্তেও। বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো সীমান্ত এলাকাতেই সাম্প্রদায়িক আক্রমণ হতে দেওয়া হবে না। কেউ চেষ্টা করলে, কঠোর হাতে দমন করা হবে।
৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘এই এলাকার যারা হিন্দু আছেন, তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। এলাকায় যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয় সে জন্য বিজিবি সজাগ রয়েছে।’