বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরোদবাদক ওস্তাদ আশীষ খাঁ মারা গেছেন শহীদদের নামে হবে দুই শতাধিক স্টেডিয়াম: আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া মানুষের জন্য লাভজনক এমন অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ২০২৫ সাল নাগাদ সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ -আইন মন্ত্রণালয়ে ১০০ দিনে গৃহীত কার্যক্রম সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ব্রাজিলের সেকেন্ড লেডির বৈঠক আজ উদীয়মান কণ্ঠশিল্পী সালমান রাজের জন্মদিন কপ-২৯ সম্মেলনে যোগ দিতে আজারবাইজান যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা বর্তমান সরকারের বৈধতা হলো গণঅভ্যুত্থান : আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন আরো তিনজন বাতিল নয় স্মার্ট কার্ডে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলছে : টিসিবির মুখপাত্র বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে : তারেক রহমান গণতন্ত্র বিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে নেই : তারেক রহমান ইসরাইল হামলা করলো লেবাননে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন হলে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা সম্ভব : মির্জা ফখরুল  বিপ্লবের মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষকেরা চিন্তার স্বাধীনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা ফিরে পেয়েছেন : অধ্যাপক ইউনূস গুম সংক্রান্ত কমিশনে ১,৬০০’র বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে পরিকল্পনা কমিশন গঠন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছয় সংস্কার কমিশন প্রধানের বৈঠক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’র নাটকের প্রদর্শনী বন্ধের কারণ জানালেন ডিজি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে ২২ নভেম্বর ঢাকায় আসছে আয়ারল্যান্ড নারী দল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আসিয়ানের সদস্য পদ পেতে ইন্দোনেশিয়ার সমর্থন চান নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম চেয়েছে সার্চ কমিটি দেশে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তরুণদের মনস্থির করার ও স্বপ্ন দেখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত লিগ্যাল এইড মাধ্যমে সরকারি খরচে অসচ্ছল বিচারপ্রার্থীদের ৪০৩২০১ মামলায় আইনি সহায়তা প্রদান লেবাননের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় ৫২ জন নিহত সাংবিধানিক ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই : আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তরুণরা বাংলাদেশকে নতুন করে পথ দেখিয়েছে: নাহিদ ইসলাম

‘আমি মরে গেলে তুমি শহিদের মায়ের সম্মান পাবে’: মাকে বলা শহিদ সাদ-এর শেষ কথা

স্বাধীনতা২৪.কম
  • Update Date : বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

“মা তুমি চিন্তা করো না, আমি মরে গেলে তোমাকে বীরের মা বলে ডাকবে, তুমি শহিদের মায়ের সম্মান পাবে। তোমাকে সবাই শ্রদ্ধা করবে”- পাঁচ আগস্ট দুপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মা বাধা দিলে একথা বলে বেরিয়ে যান সাদ। এটাই মায়ের সাথে সাদ-এর শেষ কথা।
ঢাকার ধামরাই পৌরসভার কায়েতপাড়া নিবাসী শফিকুল ইসলাম ও আঞ্জুমান আরার পুত্র আফিকুল ইসলাম সাদ। সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সাদ বড়।
সাদ-এর মা আঞ্জুমান আরা বাসস প্রতিবেদককে জানান, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মা আঞ্জুমান আরার সাথেই শেষ কথা হয় আফিকুল ইসলাম সাদের। বন্ধুদের সাথে দেখা করার কথা বলে মায়ের কাছ থেকে ২০টাকা চায় সে। মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়েই বেরিয়ে পড়ে সাদ। তখন মা বারবার আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলে বলে, “মা, তুমি আমার জন্য চিন্তা করো না, আমার অনেক বন্ধুরাও তো গেছে, আমার কিছু হয়ে গেলে বা মরে গেলে তোমাকে সবাই শহিদের মা, বীরের মা বলবে।” এর কিছুক্ষণ পরই সাভার উপজেলা ও থানার মধ্যবর্তী হার্ডিঞ্জ স্কুলের সামনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন আফিকুল ইসলাম সাদ।
আঞ্জুমান আরা বলেন, সাদ বের হওয়ার পরপরই আমার ছোট ছেলে সাজিদুলও ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এরপরই কানে ভেসে আসে গোলাগুলির শব্দ। এলাকাবাসী বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় সাজিদুলকে।
সাজিদুলের কাছেই জানতে পারি সাদ আন্দোলনে গিয়েছে। বারবার ফোনে খোঁজ নিচ্ছিলাম। দুপুরে পরপর দু’বার কথাও হয়। তৃতীয়বার বেলা ৩টার দিকে ফোন দিলে আর ফোন রিসিভ করে না। তখনই মনের ভেতর কেমন যেন করতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন আসে আমার কাছে। বলে, আন্টি আফিকুল তো মাথায় আঘাত পেয়েছে, ওকে আমরা সবাই স্থানীয় ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। অল্প পরে আবারও ফোন দিয়ে বলে, এখানে রাখেনি, আমরা ওকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, আপনারা চলে আসুন। তখন আমরা সবাই দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে দেখি গুলিবিদ্ধ আমার ছেলে অচেতন হয়ে পড়ে আছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তখন দ্রুত তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩দিন পর ৮ আগস্ট সকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সাদ।
সাদ এর মৃত্যুতে থমকে গেছে একটি পরিবারের স্বপ্নও। আদরের সন্তানের মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না শহিদ সাদের বাবা-মা।
জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শুরু থেকেই সাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদী বিভিন্ন পোষ্ট দিয়ে নিজের সমর্থনের কথা জানান দেন। ৪ আগস্ট ফেসবুকে পোষ্ট করেন, “কুড বি এ নিউ রাইজ”। এরপর লেখেন, “যেই দেশের ইতিহাস রক্ত দিয়ে শুরু হয়েছে ওই ইতিহাস আবার লিখতে রক্তই লাগবে।”
সাদ-এর বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, “কোথা থেকে কি হয়ে গেলো! আমি হতবাক। আমার পুরো পরিবারটি এলোমেলো হয়ে গেলো। এ শোক কিভাবে কাটাবো আমরা। তিনি বলেন, আট তারিখ সকালে যখন চিকিৎসকরা বললো সাদ আর নেই, তখন আমি সাদের সামনে গিয়ে ওকে তিনবার বাবা বাবা বলে ডাকি, যদি মিরাকল কিছু হয়ে যায়। কিন্তু আমার বাবা আর উঠলো না। আমার ছেলেটা অত্যন্ত মেধাবী ছিল। পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে। এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। চাকুরির প্রতি আগ্রহ না থাকলেও বড় হয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন ছিল সাদ-এর। একটি বুলেটে সবকিছুই শেষ হয়ে গেলো।”
সাদ-এর বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পড়ার টেবিল, বিছানা, খেলার ট্রফিগুলো শোভা পাচ্ছে ঘরের আনাচে কানাচে। সবই আছে নেই শুধু সাদ। সকাল গড়িয়ে দুপুর, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, আজো যেন প্রতীক্ষায় বাবা-মা আর ভাই। তবু ফেরে না সাদ। ছেলেকে হারিয়ে এ্যালবামের ছবি, আলমারিতে রাখা খেলার ট্রফি’র মাঝেই মা আঞ্জুুমান আরা খুঁজে ফিরছেন নাড়ি ছেঁড়া ধন ছেলের স্মৃতি। সাদ-এর অনুপস্থিতি মানতে পারছেন না বাবা শফিকুল ইসলাম কিংবা আদরের ছোট ভাই সাজিদুলও।
সাদ-এর ছোট ভাই সাজিদুল বলেন, “সাদ আমার বড় ভাই হলেও তার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। আমাকে অনেক ভালোবাসতো সে। যে কোন কিছুই আমার সাথে শেয়ার করতো। আমাকে সঙ্গে নিয়ে যেত। কেন যে আমাকে সেদিন সঙ্গে নিলো না, বুঝতে পারছি না। ভাইয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই।”
তিনি বলেন, যেদিন দেশ থেকে সত্যিকারের বৈষম্য দূর হবে, সেইদিনই সার্থক হবে আমার ভাইয়ের আত্মত্যাগ।
সাদ-এর প্রতিবেশি ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি, ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনে নিহত ভাগ্নের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন,  লেখাপড়ার পাশাপাশি সাদ অত্যন্ত ভালো ছেলে ছিল। সমাজের সকলের সাথে সুসম্পর্ক ছিল তার। তার ভালো ব্যবহারের জন্য মহল্লার সবাই তাকে স্নেহ করতো। সাদ-এর জন্য সকলের কাছে দোয়া চান তিনি।

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *