বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দেওয়া বিধিনিষেধের আওতায় ১৯ দিন বন্ধ থাকার পর আজ বুধবার থেকে শতভাগ যাত্রী নিয়ে শুরু হয়েছে ট্রেন, বাস ও লঞ্চ চলাচল। এজন্য গতকাল থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করেছে বাংলাদেশে রেলওয়ে, লঞ্চ ও বাস কর্তৃপক্ষ। করা হয়েছে ধোয়ামোছার কাজ। ফলে আবার পুরনো চেহারায় ফিরছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্টেশনগুলো।
দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া যাবে না: বিধিনিষেধ শেষে চালু হওয়া গণপরিবহনে কোনোভাবেই আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। একই সঙ্গে পূর্ণ আসনে যাত্রী নেওয়ার অনুমতি দেওয়ায় প্রত্যাহার করা হয়েছে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়াও। গতকাল মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে বিআরটিএ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে—সড়কপথে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন (সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক) নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থা, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিদিন মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চালু করতে পারবে। আগের ভাড়ায় (৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া বাদ দিয়ে ) গণপরিবহন চলবে; অতিরিক্ত ভাড়া কোনোভাবেই আদায় করা যাবে না।
গণপরিবহনের যাত্রী, চালক, সুপারভাইজার/কন্ডাক্টর, হেলপার-কাম ক্লিনার এবং টিকিট বিক্রয় কেন্দে র দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঈদের পর ২৩ জুলাই শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধ গতকালই শেষ হয়েছে। আজ বুধবার সব ধরনের অফিস-বিপণিবিতান খুলে যাবে, গণপরিবহনও নামবে রাস্তায়। কিন্তু তার আগে লকডাউনের শেষ দিন প্রায় সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি, পণ্যবাহী গাড়ি, সরকারি যানবাহন আর রিকশা-ভ্যানে রাজধানী যে চেহারা পেয়েছে, তা দেখে এক নাগরিকের ভাষ্য: গাড়িরা সব যেন জেগে উঠেছে।
গতকাল একদিকে ছিল কমলাপুর রেল স্টেশনের প্ল্যাটফরমে ঝাড়ুর কাজ। অন্যদিকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ব্যস্ত জীবাণুনাশক দিয়ে ট্রেন পরিষ্কারের কাজ। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ শেষে আজ বুধবার থেকে সব আসনে যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে ট্রেন। কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। দুই টিকিট কাউন্টারে হাতে গোনা কয়েক জন যাত্রী টিকিট সংগ্রহ করছেন। গতকাল মঙ্গলবার ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ আগস্টের ট্রেনের টিকিট দেওয়া হয়েছে।
সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। স্টেশনের ১০টি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। টিকিট কাউন্টারে ভিড় না থাকলেও প্ল্যাটফরমের ভেতরে ভিড় ছিল পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। ধুয়েমুছে প্ল্যাটফরম পরিষ্কার করছে একদল কর্মী। আরেক দল ব্যস্ত ছিল জীবাণুনাশক দিয়ে ট্রেনের ভেতর ও বাইরে পরিষ্কারে। সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে শতভাগ যাত্রী নিয়ে সীমিত পরিসরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। ঢাকা থেকে ২৫ জোড়া আন্তঃনগর ও ১২ জোড়া মেইল-কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে।
এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রীদের জন্য বিশেষ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে—কোনো প্রকার ভাড়া বাড়ানো হবে না। সব অগ্রিম টিকিট যাত্রার পাঁচ দিন আগে ক্রয় করা যাবে। তবে অনলাইনে ক্রয়কৃত টিকিট ফেরত দেওয়া যাবে না। কমিউটার ট্রেনের টিকিট যথারীতি নির্দিষ্ট বক্স কাউন্টার থেকে দেওয়া হবে। আসনবিহীন টিকিট বিক্রয় বন্ধ থাকবে। ট্রেনে ভ্রমণ ইচ্ছুক যাত্রীদের নিজ নিজ টিকিট নিশ্চিত করেই কেবল ট্রেনে ভ্রমণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। টিকিটবিহীন কোনো যাত্রী স্টেশনে প্রবেশ বা ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন না। মাস্ক ব্যতীত কোনো যাত্রীকে স্টেশনে প্রবেশ বা ট্রেনে ভ্রমণ করতে দেওয়া হবে না।