রাজনীতিতে সাম্প্রতিক এক আলোচনার ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেলেন, জিয়াউর রহমানের কফিনে তার লাশ ছিল না।
শোকের মাস অগাস্ট উপলক্ষে শনিবার ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন কাদের।
চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরে তার লাশ নেই- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, “জিয়াউর রহমানের জানাজায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে কফিনে জিয়ার লাশ ছিল।”
তার পাল্টা জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “হাজার হাজার মানুষ জানাজা পড়া এবং কফিনে জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা না থাকা, এটা কি এক কথা?
“মানুষ তো নিহত প্রেসিডেন্টের জন্য জানাজা পড়তে এসেছিল। সেই কফিনে যে প্রেসিডেন্ট নেই, এটা তো আর মানুষ জানত না।”
তিনি বলেন, “পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হলে ইসলামাবাদে ফয়সাল মসজিদের সামনে জিয়াউর রহমানের জানাজার চেয়ে বেশি মানুষ হয়েছিল। কিন্তু ওই কফিনে জিয়াউল হক ছিলেন না, আর এই কফিনেও জিয়াউর রহমান ছিলেন না। এটাই সত্য।”
১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডে জিয়া জড়িত ছিল দাবি করে কাদের বলেন, “তিনি মেজর ডালিমকে বলেছিলেন, ‘ওয়েল ডান মেজর ডালিম, ইউ হ্যাভ ডান আ গ্রেট জব। লরেন্স লিফশুজ, অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের বইয়ে এগুলোর বর্ণনা আছে সবিস্তারে। আত্মস্বীকৃত খুনিদের বক্তব্য আছে, প্রতিক্রিয়া আছে।”
আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে সেকুলারিজম, তা না চাইনিজ না রাশিয়ান। তার মতাদর্শ সম্পূর্ণ আলাদা এক মডেল। এটি বাংলাদেশ এবং বাঙালির মডেল।
“ধর্মীয় মূল্যবোধ সেটির প্রতিও বঙ্গবন্ধুর শ্রদ্ধা, সেই সাথে অন্য ধর্মমতকে বিকশিত করা এবং সব ধর্মের প্রতি একটি সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি রেখে সেই মূল্যবোধকে বিকাশ ঘটানো। এটি বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব এক মডেল, যা ওই দুটির সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।”
রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, “কে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের অংশ, কে পাকিস্তানপন্থি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অংশ- সে বিষয়গুলো এখন সংগঠনের মাধ্যমে আইডেন্টিফাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং সাংগঠনিক দৃষ্টিতে তা বিচার করলে হবে না।
“এখন নীতি কৌশল অবলম্বন করে চিন্তা করতে হবে। উদ্ভাবনী সৃজনশীল রাজনীতি সেখানে প্রয়োজন। এবং সেটাই হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা নিবেদন।”
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন।
অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব এ কে আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রহমত উল্লাহ, সহ-সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী এবং মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার বক্তব্য দেন।
সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু। স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোল্লা মোহাম্মাদ আবু কাওছার।